অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় কৌশলপত্র গ্রহণ

Posted by on Jun 28, 2021 in Blog | 2 comments

বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি দুর্যোগ ও জলবায়ু তাড়িত অভ্যন্তরীণ বাস্তুুচ্যুতি ব্যবস্থাপনার জন্য একটি জাতীয় কৌশলপত্র আনুষ্ঠানিক ভাবে গ্রহণ করেছে। ২০১৫ সালে কম্প্রিহেনসিভ ডিজাষ্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম-২ এর অধীনে রামরুকে একটি জাতীয় কৌশলপত্র এর খসড়া প্রণয়ন করার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করা সংস্থাসমূহ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে পরামর্শ ও মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে রামরু এর গবেষকদল কৌশলপত্রটির একটি খসড়া প্রণয়ন করে, পরবর্তীতে ২০১৯ সালে খসড়া প্রতিবেদনটি নতুন তথ্য সংযোজনের মাধ্যমের হালনাগাদ করা হয় যা ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে একটি সংশোধিত খসড়া আকারে প্রকাশ করা হয়।জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ প্রায়শই বেশ কিছু অঞ্চলকে ঝুঁকিপূর্ণ করছে এবং বিপুল সংখ্যক মানুষকে তাদের বসতভিটা ত্যাগ করে বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য করছে। এই কৌশলপত্রটিতে বিভিন্ন গবেষণার সমীক্ষা তুলে ধরে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বর্তমানে যে পরিমাণ বাস্তুচ্যুতি ঘটছে, তার মাত্রা ও তীব্রতা আসন্ন বছরগুলোতে আরও অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।

কৌশলপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় নি¤œাঞ্চলগুলো মারাতœকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে প্রতি ৪৫ জনে ১ জন এবং বাংলাদেশে প্রতি ৭ জনে  ১ জন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাস্তুচ্যুত হবে। অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র এর হিসাব অনুযায়ী ২০০৮ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে ৪৭ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। একই সংস্থার ২০১৯ সালের অর্ধবার্ষিকী প্রতিবেদনের হিসাব মতে, বাংলাদেশের ২৩টি জেলা হতে প্রায় ১৭ লক্ষ মানুষকে স্থানান্তরিত হতে হয়েছে; এর বেশিরভাগই ঘটেছে বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে, যেমন ভোলা, খুলনা ও পটুয়াখালী।

এই কৌশলপত্রটি প্রণয়নের পদক্ষেপ ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যবস্থাপনায় সরকারি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের পরিচয় বহন করে এবং বাস্তুচ্যুতি বিষয়টির প্রতি সরকারের ঐতিহ্যগত ত্রাণ-ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে এসে আরও সক্রিয়ভাবে কিছু করার সংকল্প ব্যক্ত করে। এই কৌশলপত্রের আওতায় বাস্তুচ্যুতিকে তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করে বাস্তুচ্যুতি প্রতিরোধের রূপরেখা প্রস্তুত করা হয়েছে। কৌশলপত্র অনুযায়ী বাস্তুচ্যুতির তিনটি পর্যায় হল-

১। প্রাক-বাস্তুচ্যুতি;

২। বাস্তুচ্যুতিকালীন অবস্থা;

৩। বাস্তুচ্যুতি-পরবর্তী সময়।

এই কৌশলপত্রটির মূল লক্ষ্য হল দুর্যোগ পূর্ববর্তী সময়ে বাস্তুচ্যুতি প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা, দূর্যোগ চলাকালীন অবস্থায় দূর্যোগকালীন বাস্তুচ্যুতি ব্যবস্থাপনা এবং পরবর্তীতে বাস্তুচ্যুত পরবর্তী সম্ভাব্য স্থায়ী সমাধানগুলো উপস্থাপন করা। এরই ধারাবাহিকতায় বলা যায়, কৌশলপত্রটির দীর্ঘমেয়াদী রূপকল্প হলো দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা জনগোষ্ঠীকে পরিবর্তনশীল জলবায়ু ও দুর্যোগের প্রতি সহিষ্ণু বা অভিঘাত-সক্ষম করে তোলা। এর লক্ষ্য হলো সামগ্রিক অধিকার ভিত্তিক বাস্তাবায়নযোগ্য টেকসই কাঠামো গড়ে তোলা যা বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্যোগ ও জলবায়ুজনিত অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির শিকার মানুষদের শ্রদ্ধা করবে, সুরক্ষা দেবে এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করবে। কৌশলপত্রের বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো, এটি সকল মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান কার্যক্রমগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করার দিকনির্দেশনা প্রদান করে। এটিকে সামাজিক উন্নয়ন কাঠামোর অংশ হিসেবে বিবেচনা করতে জোর প্রদান করা হয়েছে। যা সরকারের বিদ্যমান বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচিসমূহকে অর্ন্তুভুক্ত করে।

জাতীয় এই কৌশলপত্রটি বাস্তুবায়নের জন্য রামরু গবেষকদল একটি অ্যাকশন প্ল্যান/কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবে। এ লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ডঃ তাসনিম সিদ্দিকীকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যর একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে, কর্মপরিকল্পনা গ্রহণে সহায়তা এবং এই কর্মপরিকল্পনাকে আর্ন্তজাতিক মানসম্পন্ন করার লক্ষ্যে একটি আর্ন্তজাতিক উপদেষ্টা বোর্ড গঠন করা হবে।

————————————-
মোঃ রিদওয়ানুল ইসলাম চৌধুরী

রামরু

2 Comments

  1. Redwan well written. You can send this to any of the Bangla news papers.

    • Thank you so much for the inspiration, Madam. I shall do that InshaAllah.