প্রবাসী শ্রমিক আয়ের ৯০% দেশে পাঠাচ্ছেন নারীরা (দ্বিতীয় পর্ব)

Posted by on Jan 17, 2016 in Blog | Comments Off

প্রবাসী শ্রমিক আয়ের ৯০% দেশে পাঠাচ্ছেন নারীরা

মেহেদী আল আমিন

অভিবাসন খরচ তুলনামূলক কম হওয়ায় বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিক প্রেরণ আগের চেয়ে বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে প্রবাসী নারী শ্রমিকদের রেমিট্যান্স পাঠানোর হারও। শুধু তাই নয়, আয়ের অংশের দিক থেকে পুরুষের তুলনায় বেশি রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসী বাংলাদেশী নারী শ্রমিকরা। সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন (এসডিসি) ও রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) একাধিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

‘বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি ২০১৫: সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক রামরুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, একজন প্রবাসী পুরুষ তার আয়ের মাত্র ৫০ শতাংশ অর্থ দেশে পরিবারের কাছে পাঠান। পক্ষান্তরে একজন নারী প্রবাসী শ্রমিক পাঠান আয়ের ৯০ শতাংশ।

অভিবাসন খরচের অনুপাতে রেমিট্যান্স পাঠানোর দিক থেকেও পুরুষের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন নারী শ্রমিকরা। ‘ইমপেক্ট অব মাইগ্রেশন অন পোভার্টি অ্যান্ড লোকাল ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এসডিসি ও রামরুর আরেক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, একজন পুরুষ শ্রমিকের অভিবাসনে গড়ে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। পক্ষান্তরে একজন নারী শ্রমিকের গড় অভিবাসন ব্যয় এক লাখ টাকা, যা পুরুষের তুলনায় এক-চতুর্থাংশের কিছু বেশি। এদিকে একজন পুরুষ শ্রমিক মাসে গড়ে ২৩ হাজার ৮৬ টাকা রেমিট্যান্স পাঠান। এটি একজন পুরুষ শ্রমিকের আয়ের ৫০ শতাংশ। পক্ষান্তরে একজন নারী শ্রমিক গড়ে রেসিট্যান্স পাঠান ১৩ হাজার ৫২৭ টাকা, যা তাদের আয়ের ৯০ শতাংশ। পুরুষের অনুপাতে নারী শ্রমিকের অভিবাসন খরচ এক-চতুর্থাংশ হলেও পুরুষের তুলনায় নারী শ্রমিক রেমিট্যান্স পাঠান অর্ধেকেরও বেশি। এক্ষেত্রে বিনিয়োগের তুলনায় আয়ের দিক থেকে এগিয়ে নারীরা।

এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হযরত আলী বলেন, নারীদের বিদেশে যেতে তেমন খরচ নেই। সেখানে থাকা-খাওয়াও বিনামূলে পেয়ে থাকেন নারী অভিবাসীরা। এসব কারণে সেখানে তাদের ব্যক্তিগত খরচ কম হওয়ায় আয়ের সবটাই রেমিট্যান্স আকারে দেশে পরিবারের কাছে পাঠাতে পারেন। এটি পরিবারের প্রতি নারীদের অধিক মমত্ববোধকেই প্রকাশ করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারী শ্রমিকদের অভিবাসন খরচ যেমন কম, তেমনি বিদেশে নারীর থাকা-খাওয়ার খরচও কম। আর পরিবারের প্রতি অধিক মমত্ববোধের কারণে আয়ের প্রায় পুরোটাই পরিবারের কাছে পাঠান নারী প্রবাসী শ্রমিকরা। তবে বিভিন্ন অতীতের বাজে অভিজ্ঞতার জন্য নারীদের মধ্যে বিদেশে যাওয়ার আগ্রহ কম। এক্ষেত্রে মূল বাজার মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশী নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে নারী শ্রমিক রফতানি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এ বিষয়ে রামরুর সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. সিআর আবরার বণিক বার্তাকে বলেন, বিভিন্ন নেতিবাচক অভিজ্ঞতার জন্য ফিলিপিন, ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলংকা সরকার মধ্যপ্রাচ্যে নারী অভিবাসন কমিয়েছে বা ক্ষেত্রবিশেষে বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে গৃহকর্মের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় বাংলাদেশী নারী শ্রমিকদের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।

তিনি বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে শুধু রেমিট্যান্সের জন্যই নারী শ্রমিকদের বিভিন্ন গন্তব্যে পাঠানো ঠিক হবে না। গন্তব্য দেশগুলোর সরকারের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে শারীরিক নিরাপত্তা, কর্মঘণ্টা ও যেকোনো নির্যাতনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স থাকবে এমন একটি নিরাপত্তা কাঠামো নিশ্চিত করেই নারী শ্রমিক পাঠাতে হবে। আর সৌদি আরবের সঙ্গে ১০০ শতাংশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

আরব দেশগুলোর শ্রম আইন অনুযায়ী নারীরা শ্রম আইনের আওতায় পড়েন না। নারীদের সুরক্ষায় যেকোনো সময় একজন নারী শ্রমিকের সঙ্গে দূতাবাস যোগাযোগ করতে পারবে আর প্রতিটি নারী শ্রমিকের কাছে মোবাইল থাকবে দূতাবাসের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য। কিন্তু এগুলো সরকারি সিদ্ধান্ত হলেও এর বাস্তবায়ন নেই।

এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ সচিব বলেন, নারী অভিবাসন আমরা সম্মানের সঙ্গে দেখি, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যা যা করা দরকার তা করে যাচ্ছি। সৌদি আরবে একজন নারী শ্রমিক গেলে তার সঙ্গে বিনা খরচে একজন পুরুষ নিকটাত্মীয় যেতে পারবেন বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম।

২০১৫ সালে মোট ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮১ জন বাংলাদেশী বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছেন, যার মধ্যে ১ লাখ ৩ হাজার ৭১৮ জন নারী। গত বছরের তুলনায় এ বছর অভিবাসনও বেড়েছে ৩০ শতাংশ।